বলিউডের পর্দা কাঁপানো নায়িকারা এবং মন্দের উপর ভালোর জয়ের গল্প

বলিউড, ভারতের বিশাল চলচ্চিত্র জগত, কেবল বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু নয়, এটি তারকাদের জন্ম এবং কালজয়ী গল্প বলার এক বিশাল মঞ্চ। প্রতি বছর নতুন নতুন তারকাদের আগমন ঘটলেও, বলিউডের আকাশে কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্র তাদের নিজেদের স্থান ধরে রাখে। ২০২০ সালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। করোনা মহামারির কারণে নতুন মুখের আনাগোনা কম থাকলেও, প্রতিষ্ঠিত নায়িকারাই নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। বলিইনসাইডের একটি তালিকা অনুসারে, সে বছরের সেরা অভিনেত্রীদের পাশাপাশি বলিউডের সিনেমার মূল উপজীব্য বিষয়গুলোও দর্শকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

২০২০ সালের শীর্ষস্থানীয় নায়িকারা

দীপিকা পাড়ুকোন: বর্তমান সময়ের বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গণ্য করা হয় দীপিকা পাড়ুকোনকে। তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তার কারণে তালিকার শীর্ষস্থানে তার নামটি থাকা খুবই স্বাভাবিক। ২০০৭ সালে ‘ওম শান্তি ওম’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পরিচিতি পাওয়া এই অভিনেত্রী এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি।

ক্যাটরিনা কাইফ: এই তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ক্যাটরিনা কাইফ। বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। ২০০৫ সালে সালমান খানের বিপরীতে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন তিনি এবং তারপর থেকে তার সাফল্যের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

আনুশকা শর্মা: নিজের অভিনয় திறமைய গুণে খুব অল্প সময়েই বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আনুশকা শর্মা। ২০০৮ সালে ‘রব নে বানা দি জোড়ি’ সিনেমার মাধ্যমে তার বলিউডে অভিষেক হয় এবং প্রথম সিনেমাতেই তিনি দর্শকদের মন জয় করে নেন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া: সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী বলিউড ছাড়িয়ে এখন হলিউডেও নিজের স্থান তৈরি করে নিয়েছেন। অভিনয় এবং গناء দুই জগতেই তার প্রতিভা প্রশংসিত। ২০২০ সালের সেরা অভিনেত্রীদের তালিকায় তিনি চতুর্থ স্থানে ছিলেন।

শ্রদ্ধা কাপুর: ২০১০ সালে ‘টিন পাটি’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন শ্রদ্ধা কাপুর। তিনি বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম। একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়ে তিনি নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং এই তালিকায় পঞ্চম স্থান অর্জন করেছেন।

আলিয়া ভাট: বিখ্যাত পরিচালক মহেশ ভাটের কন্যা এবং করণ জোহরের ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখা আলিয়া ভাট অল্প বয়সেই তারকা খ্যাতি অর্জন করেছেন। ক্যারিয়ারে বেশ কিছু ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।

কঙ্গনা রানাওয়াত: বলিউডের অন্যতম আলোচিত এবং প্রতিভাবান অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। বিভিন্ন বিষয়ে outspoken মন্তব্যের জন্য তিনি প্রায়ই খবরের শিরোনামে থাকেন। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রী তার অভিনয় দক্ষতার জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন।

কৃতি শ্যানন: মডেলিং থেকে অভিনয়ে আসা কৃতি শ্যানন ২০১৪ সালে তার প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন। হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় অল্প কিছু সিনেমায় কাজ করলেও তিনি নিজের একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা তাকে তালিকার অষ্টম স্থানে এনেছে।

জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ: শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত এই অভিনেত্রী তার আকর্ষণীয় হাসি এবং প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য বলিউডে সুপরিচিত। ২০০৬ সালে ‘আলাদিন’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন জ্যাকুলিন এবং তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

কারিনা কাপুর খান: তালিকার দশম স্থানে থাকলেও, কারিনা কাপুর খানকে বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০০ সালে ‘রিফিউজি’ সিনেমার মাধ্যমে তার অভিষেক হয় এবং দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও জনপ্রিয়।

অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের কিছু ক্লাসিক বলিউড সিনেমা

এই অভিনেত্রীরা কেবল তাদের সৌন্দর্য বা জনপ্রিয়তার জন্য পরিচিত নন, তারা এমন সব গল্পকে পর্দায় জীবন্ত করে তোলেন যা দর্শকদের মনে গভীরভাবে ছাপ ফেলে। বলিউডের সিনেমার একটি চিরন্তন থিম হলো মন্দের উপর ভালোর জয়। নিচে এমন কিছু ক্লাসিক সিনেমার তালিকা দেওয়া হলো যা এই বার্তাকেই তুলে ধরে:

বাহুবলী: দ্য বিগিনিং (২০১৫): এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে যে, সততা, সাহস এবং ন্যায়ের জন্য অবিচল সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত প্রতারণা এবং অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে। প্রতিকূলতা যতই থাকুক না কেন, শুভ শক্তির জয় অবশ্যম্ভাবী।

গুলাব গ্যাং (২০১৪): রাজ্জো এবং তার সাহসী নারী দলের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা, যেখানে তারা তাদের শহরের অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই করে।

কাহানি (২০১২): বিদ্যা বাগচী নামের এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মায়ের গল্প, যিনি তার নিখোঁজ স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে বিপদ, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হন। তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা এবং অধ্যবসায় তাকে প্রতিটি বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে।

অগ্নিপথ (২০১২): এই সিনেমাটি বিজয়ের গল্প বলে, যে তার বাবার উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে এবং পরিবারকে ধ্বংসকারী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বদ্ধপরিকর।

আরক্ষণ (২০১১): সততা এবং ন্যায়বিচারের শক্তিকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি আকাঙ্ক্ষা, প্রতারণা এবং মুক্তির এক অসাধারণ গল্প।

মাই নেম ইজ খান: এই সিনেমাটি দেখায় যে ধৈর্য, সাহস এবং দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে অন্যায়, ভয় এবং অসহিষ্ণুতাকে অতিক্রম করা সম্ভব।

শোলে (১৯৭৫): বন্ধুত্ব, সাহস এবং ন্যায়ের এক মহাকাব্যিক আখ্যান। এই চলচ্চিত্রে দেখা যায় দুই বন্ধু এক নির্মম ডাকাতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং তাদের সাহস ও কৌশলের মাধ্যমে গ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনে।

পরিশেষে, বলিউডের আকর্ষণ শুধু তার তারকাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর গল্প বলার ধরনের মধ্যেও নিহিত, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দর্শকদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছে।