ভারত সরকারের পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনার পরিকল্পনার ঘোষণার পর সোমবারের শেয়ারবাজারে মারুতি সুজুকি, হুন্দাই মোটর, টিভিএস মোটর কোম্পানি এবং অন্যান্য অটোমোবাইল কোম্পানির শেয়ারে ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংস্কার অটোমোবাইল খাতের চাহিদাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, যা গত কয়েক প্রান্তিকে বেশ দুর্বল ছিল। এই ইতিবাচক খবরের জেরে নিফটি অটো সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন সম্মিলিতভাবে প্রায় ১ লাখ কোটি রুপি বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেয়ারবাজারে অটোমোবাইল খাতের ব্যাপক উত্থান
সোমবার নিফটি অটো সূচকের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৪টির শেয়ারই বড় ধরনের লাভের সাথে লেনদেন শেষ করেছে। সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে মারুতি সুজুকি, যার শেয়ারের দাম ৮.৮% বেড়ে ১৪,০৬৮ রুপিতে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এছাড়াও অশোক লেল্যান্ড, টিভিএস মোটর কোম্পানি, হিরো মোটোকর্প, এমআরএফ, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা এবং আইশার মোটরসের মতো বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ার ২.৬% থেকে ৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উত্থানের ফলে ভারতের বেঞ্চমার্ক নিফটি সূচক ১.৩% বৃদ্ধি পায়, যা ছিল গত তিন মাসের মধ্যে সেরা দিন।
জিএসটি ২.০: কর কাঠামো সরলীকরণের ঘোষণা
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৭ সালে জিএসটি চালুর পর সবচেয়ে বড় সংস্কারের ঘোষণা দেন। এই নতুন সংস্কারকে “জিএসটি ২.০” বা “পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি” হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রমতে, দীপাবলির মধ্যেই এই নতুন কাঠামো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ভারতে ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%—এই চারটি প্রধান হারে জিএসটি ধার্য করা হয়। প্রস্তাবিত পরিবর্তনে এই স্তর কমিয়ে দুটি করা হবে। এর ফলে, বর্তমানে ১২% এবং ২৮% করের আওতায় থাকা বেশিরভাগ পণ্য যথাক্রমে ৫% এবং ১৮% করের আওতায় চলে আসবে।
গাড়ি ও বিমা খাতে বড় ধরনের কর ছাড়ের প্রস্তাব
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে যে, এই সংস্কারের অংশ হিসেবে ছোট গাড়ির উপর জিএসটি ২৮% থেকে কমিয়ে ১৮% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোল ও ডিজেল চালিত ছোট গাড়ি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একই সাথে, স্বাস্থ্য ও জীবন বিমার প্রিমিয়ামের উপর কর বর্তমান ১৮% থেকে কমিয়ে ৫% বা এমনকি শূন্যে নামিয়ে আনারও প্রস্তাব রয়েছে। এই ঘোষণার পর আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল, এসবিআই লাইফ এবং এলআইসি-র মতো বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারও ২% থেকে ৫% পর্যন্ত বেড়েছিল।
শিল্পখাতের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ২৮% করের আওতায় থাকা অটোমোবাইলগুলো প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে ১৮% স্তরে চলে আসবে। এর ফলে গাড়ির দাম কমতে পারে এবং বিক্রিও বাড়তে পারে। শহুরে চাহিদা দুর্বল হওয়ায় গত কয়েক প্রান্তিকে ভারতীয় গাড়ি নির্মাতারা বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। অনেক কোম্পানিই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিচ্ছিল।
মারুতি সুজুকির চেয়ারম্যান আর.সি. ভার্গব এই কর যৌক্তিকীকরণকে একটি “বিশাল সংস্কার” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “গাড়ির দাম সাশ্রয়ী হলে আরও বেশি মানুষ কেনার জন্য এগিয়ে আসবে। জিএসটি-র এই পুনর্গঠন ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াবে এবং দাম কমিয়ে উৎপাদন ও বিক্রি করার সুযোগ তৈরি করবে, যা সার্বিকভাবে দক্ষতা বাড়াবে।”
তবে এই প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং সব রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জিএসটি কাউন্সিলের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। অক্টোবরের মধ্যে এই কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবে তামাকজাত পণ্য এবং বিলাসবহুল পণ্যের মতো ৫-৭টি পণ্যের ওপর ৪০% “পাপ কর” (sin tax) আরোপ করার কথাও বলা হয়েছে। এই সংস্কার এমন এক সময়ে ঘোষণা করা হলো যখন রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানির ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০% করার হুমকি দিয়েছে।