জাম্বুরা: পুষ্টিগুণে ভরপুর এক ফলের গল্প

বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি মৌসুমি ফল জাম্বুরা, যা অঞ্চলভেদে বাতাবি লেবু, বড় লেবু, বাদামি লেবু বা ছোলম নামেও পরিচিত। এর স্বাদ টক-মিষ্টি হলেও এর প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে আছে এর পুষ্টিমান ও উপকারী উপাদানগুলোতে। বিশেষত ভিটামিন সি-এর প্রাচুর্যে ভরপুর জাম্বুরা বহু ধরনের শরীর উপকারী উপাদানের উৎস।

ভিটামিন সি-এর ভাণ্ডার

জাম্বুরা যে কেবল রসাল ও সুস্বাদু তাই নয়, এতে আছে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। তুলনায় কাগজি বা পাতি লেবুতে থাকে মাত্র ৬৩ মিলিগ্রাম। এই ভিটামিন সি দেহের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে এবং ঠাণ্ডাজনিত নানা সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করে।

ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক

জাম্বুরার একটি বিশেষ উপাদান লিমোনয়েড, যা ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষকে নষ্ট করতে সক্ষম। বিশেষ করে এটি অন্ত্র, অগ্ন্যাশয় ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া এতে থাকা আঁশ মলাশয়ের ক্যানসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ওজন কমাতে সহায়ক

জাম্বুরা উচ্চ আঁশযুক্ত একটি ফল। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত জাম্বুরা খেলে শরীরের ওজন কমানোর একটি প্রাকৃতিক সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

ভিটামিন সি ছাড়াও জাম্বুরায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা বিভিন্ন রোগ থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়। এটি রক্তনালীর কার্যকারিতা বাড়ায়, এবং ডায়াবেটিস, পাকস্থলীর জটিলতা, জ্বর, ঘুমের সমস্যা ও হজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

রক্ত চলাচল সহজ করে

জাম্বুরাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা রক্তনালীর প্রসারণে সাহায্য করে। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ সহজ করে। এর ফলে হৃদপিণ্ডে চাপ কমে এবং স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা ধমনি কাঠিন্যের আশঙ্কা হ্রাস পায়।

বার্ধক্য প্রতিরোধে উপকারী

জাম্বুরায় আছে স্পারমেডিন নামের একটি উপাদান, যা কোষের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ দেরিতে পড়ে এবং শরীর দীর্ঘদিন তরুণ থাকে।

হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখে

উচ্চ আঁশের কারণে জাম্বুরা হজমে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দূর করে। হজম রস নিঃসরণে এটি সক্রিয় ভূমিকা রাখে, ফলে খাদ্য সহজে পরিপাক হয় এবং পেটের অস্বস্তি দূর হয়।

হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক

হাড় সুস্থ রাখতে প্রয়োজন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম—এ ধরনের খনিজ উপাদান জাম্বুরায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। নিয়মিত এই ফল খেলে হাড় দুর্বল হওয়া বা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।