এক বন্ধুত্ব, দুই নিমন্ত্রণ এবং একটি কঠিন সিদ্ধান্ত

যখন দুজন কাছের মানুষের কাছ থেকে দুটি ভিন্ন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ আসে, তখন যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এক্ষেত্রে একজনকে অসন্তুষ্ট করার ঝুঁকি থেকেই যায়। সম্প্রতি এমনই এক দ্বিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন সাতাশ বছর বয়সী এক যুবক। চলুন জেনে নেওয়া যাক, তিনি কি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

একদিকে ছিল তার তিন বছরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ৩০তম জন্মদিন, আর অন্যদিকে ছিল তার প্রেমিকের মায়ের জন্য আয়োজিত একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান। এই পরিস্থিতিতে তিনি এমন একটি সিদ্ধান্ত নেন, যার ফলে তার বন্ধুত্ব একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়।

জন্মদিনের দাওয়াত এবং প্রেমিকের আমন্ত্রণ বিভ্রাট

ঘটনার শুরু হয় যখন যুবকের ২৯ বছর বয়সী বন্ধু ‘আর’ তাকে তার ৩০তম জন্মদিনের ঘরোয়া পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান। তারা প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধু এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মজবুত। তারা একসঙ্গে ঘুরতে যেতেন, ব্রাঞ্চ করতেন এবং একে অপরের কঠিন সময়ে পাশে থাকতেন। এমনকি যুবকের বর্তমান সম্পর্কের শুরুর সাক্ষীও ছিল তার এই বন্ধু।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন যুবকটি জানতে পারেন যে তার বন্ধু ‘আর’ তার প্রেমিক ‘জে’-কে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাননি, যদিও তারা প্রায় এক বছর ধরে ডাবল ডেটে যেতেন। বিষয়টি নিয়ে যুবকটি তার বন্ধুর সাথে কথা বললে, বন্ধুটি তার নতুন অ্যাপার্টমেন্টের আকার ছোট এবং মাত্র দশজন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর সীমাবদ্ধতার কথা বলেন। তিনি জানান, যদি কেউ আসতে অপারগ হয়, তবে তিনি তার প্রেমিককে জানাবেন। এই উত্তরে যুবক এবং তার প্রেমিক দুজনেই কিছুটা অবাক এবং আহত হন।

জন্মদিনের সাথে পারিবারিক অনুষ্ঠানের সংঘাত

এর কিছুদিন পরেই, যুবকের প্রেমিক ‘জে’ জানান যে তার মা একটি নির্দিষ্ট তারিখে মাতৃ দিবসের একটি বিলম্বিত পারিবারিক উদযাপনের আয়োজন করেছেন এবং তারা দুজন সেখানে আমন্ত্রিত। যেহেতু ‘জে’-এর বাবা-মা কয়েক ঘণ্টা দূরত্বে বসবাস করেন, তাই তাদের সাথে দেখা করার সুযোগ খুব কমই আসে। তাই যখনই সুযোগ আসে, তারা তা হাতছাড়া করতে চান না।

কিন্তু যুবকটি বুঝতে পারেন যে তারিখটি তার বন্ধু ‘আর’-এর জন্মদিনের পার্টির সাথে মিলে যাচ্ছে। তার প্রেমিক তাকে বন্ধুর জন্মদিনে যেতে বললেও, তিনি নিজে থেকেই একটি অস্বস্তি বোধ করেন। কারণ তার প্রেমিক ‘জে’ তার পরিবারের সাথে অনেক সময় কাটান এবং তিনিও একইভাবে ‘জে’-এর পরিবারের পাশে থাকতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি তার বন্ধুকে জানান যে পারিবারিক কারণে তিনি জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

সিদ্ধান্তের পর বন্ধুত্বের টানাপোড়েন

বন্ধুকে নিজের অপারগতার কথা জানানোর পরেই সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রথমে বন্ধুটি সংক্ষেপে উত্তর দিলেও পরে একটি দীর্ঘ বার্তা পাঠিয়ে তার হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “আমি খুবই হতাশ এবং বিরক্ত যে তুমি আমার ৩০তম জন্মদিনের চেয়ে তোমার প্রেমিকের বিলম্বিত মাতৃ দিবসের অনুষ্ঠানকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছ। আমি তোমার জন্মদিনের ক্ষেত্রে কখনো এমনটা করতাম না। আমার মনে হয় আমাদের এখন কিছুদিন কথা না বলাই ভালো।”

এই বার্তার উত্তরে যুবকটি তার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ক্ষমা চান এবং বলেন যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে কষ্ট দিতে চাননি। তিনি তার বন্ধুর জন্মদিনটি ভালোভাবে উদযাপন করার জন্যেও শুভকামনা জানান। কিন্তু এরপরেও তাদের মধ্যে দূরত্ব থেকেই যায়। যুবকটি একদিকে যেমন তার সিদ্ধান্তের জন্য কিছুটা অনুতপ্ত, তেমনই বন্ধুর আচরণেও তিনি অবাক। তার মতে, ‘আর’ প্রথমে তার প্রেমিককে আমন্ত্রণ না জানিয়ে এবং পরে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বিষয়টি আরও জটিল করে তুলেছেন।

প্রকৃত বন্ধুত্বের গুণাবলী কী?

এই ঘটনাটি বন্ধুত্ব এবং সম্পর্কের অগ্রাধিকার নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দেয়। একজন ভালো বন্ধুর গুণাবলী কী হওয়া উচিত? বন্ধুত্বে বিশ্বাস, বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার গুরুত্ব কতটুকু? আসুন, একজন ভালো বন্ধুর কিছু অপরিহার্য গুণাবলী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

বিশ্বাস এবং আস্থা যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিশ্বাস। বন্ধুত্বেও এর ব্যতিক্রম নয়। তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কথায় প্রভাবিত না হয়ে বন্ধুর প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখাই একজন প্রকৃত বন্ধুর পরিচায়ক। বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তা জোড়া লাগানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

দুঃসময়ে পাশে থাকা প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয় বিপদের সময়ই পাওয়া যায়। কোনো রকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই বন্ধুর প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া এবং তার কঠিন সময়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে পাশে থাকাই সত্যিকারের বন্ধুত্বের লক্ষণ। যে বন্ধু আপনার প্রয়োজনে সর্বদা উপস্থিত থাকে, তিনিই আপনার আসল বন্ধু।

পারস্পরিক সম্মান ও সততা বন্ধুর যেকোনো সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছাকে সম্মান জানানো উচিত। যদি তার কোনো বিষয় আপনার পছন্দ না হয়, তবে তা সরাসরি ও শ্রদ্ধার সাথে জানানোই শ্রেয়। বন্ধুত্বে মিথ্যা বা কৃত্রিমতার কোনো স্থান নেই। নিজের ব্যক্তিত্বকে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা এবং বন্ধুর প্রতি সৎ থাকাই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের চাবিকাঠি।

যোগাযোগ এবং সময় দেওয়া সময়ের সাথে সাথে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। এর ফলে হয়তো আগের মতো ঘন ঘন দেখা বা কথা বলা সম্ভব হয় না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে সম্পর্কের গুরুত্ব কমে গেছে। একজন প্রকৃত বন্ধু সবসময় যোগাযোগের চেষ্টা করেন এবং পুরনো সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন। ব্যস্ততার অজুহাতে বন্ধুত্বকে হারিয়ে ফেলা উচিত নয়, বরং একে অপরকে সময় দিয়ে সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ভালো শ্রোতা হওয়া বন্ধুত্ব মানে শুধু নিজের কথা বলে যাওয়া নয়, বরং বন্ধুর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনাও অত্যন্ত জরুরি। বন্ধুর সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, তার অনুভূতিকে বোঝা এবং কোনো বিষয় নিয়ে উপহাস না করাই একজন আদর্শ বন্ধুর দায়িত্ব। এর মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও গভীর হয় এবং সম্পর্ক মজবুত থাকে।