খুলনার ইতিহাস ও প্রকৃতির স্পর্শে: এক নজরে দর্শনীয় স্থানগুলো

খুলনা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানকার নানা দর্শনীয় স্থান যেমন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে, তেমনি রয়েছে বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক বিস্ময়। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো খুলনার কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ও সেখানে যাওয়ার সহজ উপায়।

সুন্দরবন: প্রকৃতির বিস্ময়

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের অধিকাংশ অংশই বাংলাদেশে অবস্থিত, যার বিস্তৃতি প্রায় ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার। গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই বনভূমিতে রয়েছে করমজল, দুবলার চর, কটকা ও হিরণ পয়েন্টের মতো জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, কুমির এবং হরিণের আবাসভূমি এই বন।

যেভাবে যাবেন: খুলনা থেকে লঞ্চে বা বাসে কয়রা হয়ে সুন্দরবনে পৌঁছানো যায়।

শিরোমণি: কৌশলগত যুদ্ধজয়ের স্থান

খুলনার শিরোমণি অঞ্চল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর খুলনা মুক্ত হয় এবং এখানেই অনুষ্ঠিত হয় কৌশলগত এক বিজয়। বর্তমানে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।

যেভাবে যাবেন: খুলনা থেকে ফুলতলা রুটের বাসে উঠে শিরোমণি বাসস্ট্যান্ডে নেমে স্থানীয় পরিবহনে যাওয়া যায়।

গল্লামারী: বেদনাবহ গণহত্যার স্মৃতি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ময়ূর নদীর তীরে অবস্থিত গল্লামারী মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গণহত্যার স্থানে পরিণত হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা এখানে প্রায় ১৫,০০০ নিরীহ মানুষ হত্যা করে। ১৯৯৫ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়, যার সম্প্রসারণ কাজ এখনও চলছে।

যেভাবে যাবেন: সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় সরাসরি গল্লামারী পৌঁছানো যায়।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি

রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে শহীদ হন। এই সমাধি জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি পবিত্র স্থান।

যেভাবে যাবেন: খুলনা থেকে বাসে রূপসা উপজেলা হয়ে বাগমারা গ্রামে পৌঁছানো যায়।

সেনহাটি: কবির জন্মভূমি

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্মস্থান সেনহাটি গ্রাম। তার ‘দুটি কবিতা’ আজও সাহিত্যপ্রেমীদের মুখস্থ। সেনহাটি গ্রাম সাহিত্যিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি স্থান হিসেবে পরিচিত।

যেভাবে যাবেন: খুলনা থেকে দিঘলিয়া রুটে নদী পার হয়ে স্থানীয় বাহনে যাওয়া যায়।

বকুলতলা: বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি

খুলনার জেলা প্রশাসকের বাংলো, যা ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত, সেখানে একসময় বসবাস করতেন উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এখানেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘কপালকুন্ডলা’।

যেভাবে যাবেন: খুলনা শহরের রূপসা নদীর তীরে অবস্থিত এই বাংলোতে যাওয়া যায় জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে।

রাড়ুলী: বিজ্ঞানীর জন্মভূমি

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্ম রাড়ুলী গ্রামে। তিনি ছিলেন কেবল বিজ্ঞানী নন, বরং সমাজ সংস্কার ও শিক্ষায় অগ্রদূত। এখানে তিনি কো-অপারেটিভ ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

যেভাবে যাবেন: খুলনা থেকে বাসে পাইকগাছা হয়ে রাড়ুলী সড়কে নেমে রিকশা বা অটোরিকশায় যাওয়া যায়।

পিঠাভোগ: রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের বসতভিটা

পিঠাভোগ গ্রাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষদের বাসভূমি। এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে ভিটার নিদর্শন। গ্রামে রবীন্দ্রনাথের একটি আবক্ষ মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতি বছর তার জন্মদিন পালন করা হয়।