কসপি সূচকের শক্তিশালী শুরু
৩০ জুলাই সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক ৩,২৩৩.৩১ পয়েন্টে লেনদেন শুরু করে, যা পরে সকাল ৯টা ২ মিনিট নাগাদ আগের দিনের তুলনায় ১০.৩২ পয়েন্ট (০.৩২%) বেড়ে ৩,২৪০.৮৯ পয়েন্টে পৌঁছায়। এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় কেনাবেচা। তারা প্রায় ৫৭১ কোটি ওনের শেয়ার কিনেছে, যেখানে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা যথাক্রমে ৩০৩ কোটি ও ১০৭ কোটি ওনের শেয়ার বিক্রি করেছে।
বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও কসপির ব্যতিক্রমী প্রবণতা
যদিও আগের রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শেয়ারবাজার সূচকই মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সিদ্ধান্তকে সামনে রেখে পতনে শেষ হয়েছে, কসপি সূচক তা থেকে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সূচকটি টানা পাঁচদিনের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ২০২১ সালের আগস্টের পর প্রথমবার ৩,২৩০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে।
বিশেষত, বাজার মূলধন অনুযায়ী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ও এসকে হাইনিক্স-এর শেয়ারদর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে স্যামসাং ১.৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, স্যামসাং বায়োলজিক্স, হুন্দাই মোটরস, কিয়া এবং কেবি ফিনান্সিয়াল-এর মতো কোম্পানির শেয়ারেও ঊর্ধ্বমুখী চাপ দেখা গেছে।
কসডাকেও দেখা গেল ইতিবাচক প্রবণতা
একই সময়ে কসডাক সূচকও আগের দিনের তুলনায় ২.০৪ পয়েন্ট (০.২৫%) বেড়ে দাঁড়ায় ৮০৬.৪৯ পয়েন্টে। যদিও বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কসডাকে বিক্রির দিকে ছিল, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ২০৯ কোটি ওনের শেয়ার কেনায় সূচকের এই উত্থান সম্ভব হয়েছে। তবে কসডাকের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর শেয়ারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে—আল্টিওজেন, ইকোপ্রোবিএম ও পেপট্রন-এর শেয়ার বেড়েছে, অন্যদিকে এইচএলবি, ফার্মারিসার্চ ও সামচনডাং ফার্মাসিউটিক্যাল-এর শেয়ার কমেছে।
মুদ্রাবাজারেও দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা
এদিকে, সিউল ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটে ডলারের বিপরীতে কোরিয়ান ওনের বিনিময় হার ০.৬০ ওন (০.০৪%) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩৮৯.৭০ ওনে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডলার চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ও সম্ভাব্য সংশোধন
একদিন আগে কসপি সূচক ২১.০৫ পয়েন্ট (০.৬৮%) বেড়ে ৩,২৩০.৫৭ পয়েন্টে লেনদেন শেষ করে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ ক্লোজিং ছিল। ২০২১ সালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩,৩১৬.০৮ পয়েন্ট ছোঁয়ার আশাবাদ তৈরি হলেও, কিছু বিশ্লেষক এখন বাজার সংশোধনের সম্ভাবনার কথাও বলছেন।
হানহা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ-এর গবেষক কিম সু-ইয়ন বলেন, “গত মাসে কসপি সূচক ১৩.৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এক মাসে ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধির অর্থ হলো বাজারে প্রচুর এনার্জি আছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী মাসে কিছুটা সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।”
দ্বিতীয় প্রান্তিকের আয় হতাশাজনক, বিনিয়োগকারীদের চিন্তা বাড়ছে
২৮ জুলাই পর্যন্ত কসপিতে অন্তর্ভুক্ত যেসব কোম্পানি দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে ৬৮টি কোম্পানির আয় পূর্বাভাসের তুলনায় ৭.১ শতাংশ কম হয়েছে। বড় কোম্পানিগুলোর মুনাফা গড়ে ৭.৩ শতাংশ কম এসেছে, আর মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানের লাভ ২.০ শতাংশ কম হয়েছে। এর ফলে, বিশেষ করে রপ্তানিনির্ভর বড় কোম্পানিগুলোর দুর্বল আয় বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
এর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদের পরিবর্তে এখন সতর্কতার মনোভাব বাড়ছে। বাজারে সম্প্রতি তারল্য, কর কাঠামো সংস্কারের মতো বিষয়গুলো শেয়ারদর বাড়াতে সাহায্য করেছে, কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীরা আয় ও মূল্যায়ন সম্পর্কিত ঝুঁকির দিকেও নজর দিচ্ছেন।